প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস ও বর্তমান অবস্থা

প্রাচীন নগরী গৌড় নামে খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অন্তর্গত চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নে ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান মহারাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জ্ঞান বিতরনের ক্ষেত্রে দ্বীপ শিক্ষা জালিয়ে অগনিত শিক্ষার্থীদের  জ্ঞানালোকে উদ্ভাসিত করে আসছে। সময়ের বিবর্তনে ও এলাকাবাসীর চাহিদার প্রেক্ষিতে ১৮৬৯ সাল হতে নিরলসভাবে শিক্ষাদান কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

মহারাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা হতে ১০ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে মহানন্দা নদীর তীর ঘেষে মহারাজপুর ইউনিয়নের ০১ নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত মিঞাপাড়া  এলাকায়    ছায়াঘেরা আম্রকাননের  মাঝে শান্ত নিরিবিলি পরিবেশে গড়ে উঠেছে।  উদ্দেশ্য ছিল এলাকার অবহেলিত ও শিক্ষা বঞ্চিত জনসাধারণের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটানো এবং জাতির উন্নয়ন করা। মহারাজপুর গ্রামের তৎকালীন স্বনামধন্য ব্যক্তি জনাব জিয়াউল হক মিঞা ১৮৬৯ সালে উক্ত বিদ্যালয়ের জন্য  জমি দান করেন। বিদ্যালয়টি যথাক্রমে ময়েদুল হক মিঞা, দবিরউদ্দীন হক মিঞা, ইউনুস মিঞা সহ আরও কিছু সংখ্যক শিক্ষানুরাগীদের নিয়ে যাত্রা শুরু করে । তৎকালীন পাকিস্তান আমলে বিদ্যালয়টিতে ফ্রি-প্রাইমারী হিসেবে ১ম, ২য় ও ৩য় শ্রেণিতে পাঠদান করা হতো। পরে সরকারি বিধি মোতাবেক ১ম থেকেই ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান কার্যক্রম চালু হয়। বর্তমানে একটি ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত ও একটি স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে।

এ প্রতিষ্ঠান হতে শিক্ষাবিদ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিচারক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, রাজনীতিবিদসহ অনেক মেধাবীরা দেশে বিদেশে স্বনামে খ্যাত হয়েছে।

সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হবার পর বিদ্যালয়ের শিক্ষক, পরিদর্শক ও ব্যবস্থাপকদের উন্নয়নের জন্য ব্যাপক কর্মসূচী হাতে নেওয়া হয়। এর ফলে সামগ্রিকভাবে প্রাথমিক শিক্ষার উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শিক্ষাগত ও পেশাগত যোগ্যতা, বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা, শ্রেণীকক্ষ ব্যবস্থাপনা সর্বোপরি পাঠদান ব্যবস্থাপনা দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন করার লক্ষ্যে অনুসরণযোগ্য আদর্শ প্রতিষ্ঠান গড়ে।

প্রতিষ্ঠানটি ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালে বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ করা হয়। যার ই.এম.আই.এস কোড নং-১১২০৩০৭০১ এবং বিদ্যালয় কোড – ১১৬৫৯১, উপজেলায় বিদ্যালয় নম্বর-৪১। বিদ্যালয়ের জমির পরিমাণ-০১ একর। বিদ্যালয়টির তিনটি পাকা ভবন ও একটি খেলার  বড় মাঠ রয়েছে। মোট কক্ষের সংখ্যা ১০টি। যার একটি প্রধান শিক্ষকের কক্ষ, ১টি অফিস কক্ষ ও অন্য ৮টি শ্রেণিকক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য ১০টি টয়লেট রয়েছে। বিদ্যালয়ে পানীয়-জল সরবরাহের সু-ব্যবস্থা রয়েছে।

শিশু জরিপ, ভর্তি, উপস্থিতি ঝরে পড়াঃ

বিদ্যালয় ক্যাচমেন্ট এলাকার জরিপকৃত শিশু ৪+ ১০+ বয়সী শিশুর সংখ্যা ১০৪৮জন। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩৪৫ জন। অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জরিপকৃত সকল শিশুই ভর্তি হয়েছে। ভর্তির হার ১০০%। বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণিতে ছাত্রদের গড় উপস্থিতি ৯৫%। বর্তমানে ঝরে পড়ার হার ১%।

প্রাতিষ্ঠানিক সফলতাঃ

বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে সুদক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকমন্ডলি দ্বারা পাঠদান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হওয়ায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার গুণগতমান আশাব্যঞ্জক।

সহশিক্ষাকার্যাবলীঃ

সরকারি রুটিন মাফিক নিয়মিত বিদ্যালয়ে খেলাধুলা, কাবদল কার্যক্রম, গান, আবৃত্তির আসর ও বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আগ্রহ সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতিবছর মেধা পুরষ্কার প্রদান করা হয়। খেলাধুলায় উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে অনেক সাফল্য রয়েছে। ফুটবল খেলায় বিভাগীয় পর্যায়ে রানার্সআপ হ‌ওয়ার গৌরব অর্জন করেছে।

বিদ্যালয়ে সংরক্ষিত খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের বিভিন্ন সরঞ্জামাদি : (১) ফুটবল (২) ক্রিকেট সেট (৩) ব্যাডমিন্টন সেট (৪) বাগাডুলি (৫) লুডু (৬) ফিসিং গেম (৭) স্কিপিং (৮) দাবা রয়েছে।

কাবদলঃ

বিদ্যালয়ে একটি সুসজ্জিত কাবদল রয়েছে। নিয়মিত প্যাকমিটিং, প্যারেড, পি.টি ও বিভিন্ন কলাকৌশল প্রদর্শনের মাধ্যমে স্থানীয়, আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ের কাব কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে সুনাম অর্জন করেছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক স্বাক্ষরতা দিবস পালন, বৃক্ষরোপণ সপ্তাহ পালন, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান এবং বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রমে বিদ্যালয়ের কাবেরা অংশগ্রহণ করে থাকে।

পোশাকঃ

বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্রদের শতভাগ নির্ধারিত পোশাক রয়েছে।

ফুলবাগানঃ

বিদ্যালয়ের ফুল বাগানের কাজ চলমান এবং প্রায় ৫০টি টবে বিভিন্ন প্রকার মৌসুমী ফুলসহ পাতাবাহার গাছ লাগিয়ে বিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রী দ্বারা গাছগুলোর পরিচর্যা করা হয়।

পাঠদানঃ

শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ পাঠের উপযোগী পাঠটীকা ও উপকরণসহ প্রতিটি শ্রেণিতে পাঠদান করে থাকেন। এছাড়া মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে আধুনিক ও সময়োপযোগী পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এতে শিক্ষার্থীদের শিখন কার্যক্রম অপেক্ষাকৃত স্থায়ী হয়।

শিক্ষা সফরঃ

পুঁথিগত বিদ্যা অথবা লোকমুখে শুনে বিশ্বাস অর্জন এবং মনে রাখা কষ্টকর হলেও সরজমিনে দেখার পর তা বাস্তবে রূপ নেয়। বিষয় বস্তুকে স্মরণ করা সহজ হয়। এ লক্ষ্যে প্রতিবছর ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে দেশের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থানে  শিক্ষা সফর করা হয়।